Wednesday 20 September 2017

মুক্ত বাংলাঃ-সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনার চরে জলদস্যু আতঙ্কে চরাঞ্চলে মানুষ।



 কাজিপুর থেকে টি এম কামালঃ-
যমুনা নদীতে পানি বাড়ার ও কমার সময় জলদস্যু আতঙ্কে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে বসবাসকারী দেড় লাখ মানুষ। যমুনার বুকে জেগে ওঠা নাটুয়ারপাড়া চর ছাড়া ৫২টি চরের কোনোটিতে পুলিশ ক্যাম্প না থাকায় বিচ্ছিন্ন এসব জনপদে রাত নামলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। অন্য মালপত্রের চেয়ে গরু ও ছাগলের দিকে জলদস্যুদের নজর বেশি থাকে বলে অনেকে রাতে দলবেঁধে গোয়ালঘর পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন। এদিকে, মনসুরনগর ইউনিয়নের কুমারিয়াবাড়ীতে চরে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সাত বছর আগে প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
এলাকাবাসী জানান, বর্ষা মৌসুমে, অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে বৃষ্টি আর উজানের পানিতে যমুনা নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তবে অব্যাহত ভাঙনের কারণে কাজিপুর উপজেলার মূল ভূখগু ক্রমে ছোট হয়ে আসছে আর বাড়ছে চরের পরিধি। ফলে ৩২৮.১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের অর্ধেকটাই এখন চরবেষ্টিত হয়ে পড়েছে। ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি পুরোপুরি এবং আরও ৪টি ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে দ্রুত যাতায়াত করা যায় বলে এ সময় জলদস্যুদের তৎপরতা বেড়ে যায়। রাত নামলেই তারা চরগুলোতে হানা দিতে শুরু করে। শুধু চরাঞ্চলেই নয়, দিনের বেলায়ও তারা অস্ত্রের মুখে মাঝনদীতে যাত্রী ও মালবোঝাই নৌকা আটকে সর্বস্ব লুটে নেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই দস্যুরা সটকে পড়ে। পুলিশের রেকর্ড এবং ভুক্তভোগীদের বর্ণনা অনুযায়ী, গত এক দশকে চরাঞ্চল ও মাঝনদীতে এ ধরনের ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অর্ধশত ঘটনা ঘটেছে।
চরাঞ্চলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ডাকাতি হয় তিন বছর আগে ২০১৪ সালের জুলাই রাতে। সেবার ৪০-৫০ জনেরসশস্ত্র ডাকাত দল বাটিয়ার চরে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে লোকজনকে জিম্মি করে ৩৫টি গরুসহ ১২ লাখ টাকার মালপত্র লুট করে। বাধা দিতে গিয়ে ডাকাতদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক সাতজন আহত হন। জলদস্যুরা পরের বছরের ১৫ জুন সন্ধ্যায় মাঝনদীতে হানা দিয়ে যাত্রীবাহী নৌকা আটকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ প্রায় আট লাখ টাকার মালপত্র লুট করে। একই বছরের যাত্রীবাহী নৌকাতে ডাকাতির সময় পুলিশের গুলিতে প্রায় ৫/৭ জন ডাকাত নিহত হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
নদীপথে ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের চরগুলোতে জানমালের নিরাপত্তায় স্থায়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের প থেকে একাধিকবার আশ্বাসও দেওয়া হয়। মনসুরনগর উনিয়নের কুমারিয়াবাড়ী চরে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনে প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে জলদস্যুরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। চরবাসীও তাদের কাছে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
মাজনাবাড়ী ও চরছিন্না গ্রামের আমিনুল ইসলাম ইসলাম মাষ্টার, কামাল উদ্দিন মাষ্টার, নূরু হোসেন জানান, চরে যাদের গরু আছে, তারা এখন রাত জেগে গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন। তারা বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই গরু-ছাগল রার জন্য পাহারা দিতে হয়। তারপরও অনেক সময় ডাকাতি ঠেকানো যায় না। কারণ, ডাকাতদের হাতে অস্ত্র থাকে।' ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ওফরে রাজমহর স্বীকার করেন, নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় চরের লোকজনের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পাশের বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ ও খাসরাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী জানান, বগুড়া ও জামালপুর জেলার সীমানাসংলগ্ন চরের মানুষও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, 'চরে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগের কথা অনেক দিন ধরেই শুনছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে চরের মানুষ পুরোপুরি নিরাপত্তাহীন। নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল মান্নান চাঁন ও চরগিরিশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল হক মিন্টু জানান, মাঝেমধ্যে পুলিশ দিনের বেলায় নৌকা নিয়ে টহল দেয়, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়।
কাজিপুর থানার ওসি সমিত কুমার কুন্ডু জানান, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি। নৌকায় চলাচলকারী মানুষ এবং চরবাসীর নিরাপত্তায় নদীতে তাদের টহল কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে তা নিয়মিতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। ওসি বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে জানানো হয়েছে। আশা করি, জনবল পাওয়া যাবে এবং টহলও বাড়ানো সম্ভব হবে।
   
 

No comments:

Post a Comment

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে কাজিপুরের ইজিবাইক চালক

                                       সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার অনিক বাবু (২০) নামের এক ইজিবাইক চালককে অজ্ঞান করে মোবাইল ফোন ও বাইক...