Sunday, 24 September 2017

মুক্ত বাংলাঃ-লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় যমুনা চরের নারীদের।

লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় যমুনা চরের নারীদের।

টি এম কামাল : দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জতির যমুনা চরের সহস্রাধিক অসহায় নারী প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করছেন। প্রকৃতির নির্মমতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় যমুনা চরের নারীদের। ক্ষুধা আর দারিদ্র্য তাদের নিত্যসঙ্গ। একদিকে প্রকৃতির নির্মমতা, অপরদিকে বেঁচে থাকার সোনালী স্বপ্নের হাতছানি। নদীভাঙনের করাল গ্রাস থেকে বাঁচার প্রত্যাশায় ধু-ধু মরুভূমির ন্যায় বালির পথ পেরিয়ে চলে নতুন ঠিকানার আশায়। কিন্তু প্রমত্তা নদী সেখানেও হানা দিয়ে এদের করছে সর্বস্বান্ত। পাড় ভাঙে চর ডোবে।
প্রতিনিয়তই অভাব আর সীমাহীন দারিদ্র্যতার কবলে ক্ষুধার হাহাকার। নানা রোগ-শোক জীবনকে দুর্বিষহ করলেও থেমে থাকে না মমতা বেগমের মতো হাজারো নারীর জীবন। প্রতিনিয়ত নদীভাঙন-প্লাবন এবং জীবনসংগ্রামের সঙ্গে অবিরত সংগ্রামরত বিধবন্ত হাজেরার মতো যমুনা চরের নারীরা জীবনের কাছে হার মানতে নারাজ। প্রবল ভাঙন, ভূমিক্ষয়, বার বার বন্যা, প্রচগু ঝাড়, ক্ষুধা-বঞ্চনা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত উত্তর জনপদের সহস্রাধিক অসহায় নারী প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করছেন। বিশেষ করে প্রতিবছর উজানের পাহাড়ি ঢলে যমুনা-ব্রক্ষপুত্র-তিস্তা-ভয়স্করী রুপ ধারণ করে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত বানের পানিতে তলিয়ে যায়। চর ডোবে, পাড় ভাঙে।
এতে আয়-রোজগারহীন দরিদ্র ভূমিহীন হাজার হাজার নারীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে প্রতিবছরের আশ্বিন-কার্তিক মাসে চরাঞ্চলে কাজের অভাবে শুরু হয় মঙ্গা। এ সময় নৌ-চলাচল, মাছ ধরা এবং থাকে না কোনো ক্ষেতের ফসল অথবা দিনমজুরের কাজ। এ কারণে কাজের সন্ধ্যানে অনেকে শহরের আসেন। নিরুপায় অনেকেই ঘরের টিন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি বিক্রি করে কিছুদিন সংসার চালান। ভূমিহীন নিঃস্ব দিনমজুররা কচু-ঘেচু খেয়ে অর্ধহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন কাটান। দীর্ঘদিনের অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে অনেক নারী, শিশু ও বয়স্ক লোকের অকাল মৃত্যু ঘটে। নদীভাঙনে বার বার বসতবাড়ি স্থানান্তর এদের নিত্যসঙ্গী।
প্রতিদিন ইঞ্চি ইঞ্চি ভাঙন নিঃস্ব করছে হাজার হাজার চরবাসীকে। তবুও চরের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন তারা। যমুনার বিভিন্ন চর ঘুরে জানা গেছে নারীদের বেঁচে থাকার সংগ্রামী কথা। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। জীবনের অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত যমুনার চরের হাজার হাজার নারী আজ নানা সামাজিক বঞ্চনায় দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। অসুস্থ হলে নেই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা। ঝাড়-ফুঁক আর কবিরাজের ওপর নির্ভর তাদের জীবন। ছেলে-মেয়েদের জন্য নেই ভাল শিক্ষার ব্যবস্থা। চরের অন্যের জমিতে চাষাবাদ করছেন অনেকে। সারাদিনে যা রোজগার হয়, তাতে চলে না কারও সংসারই। বার বার প্রমত্তা যমুনার সঙ্গে লড়াই করে চরের নারীরা ক্লান্ত। বেঁচে থাকার জন্য জন্য যখন স্বপ্ন দেখেন, তখনই আঘাত হানে রাক্ষুসী যমুনা।

No comments:

Post a Comment

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে কাজিপুরের ইজিবাইক চালক

                                       সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার অনিক বাবু (২০) নামের এক ইজিবাইক চালককে অজ্ঞান করে মোবাইল ফোন ও বাইক...