টি এম কামাল : মাঠজুড়ে সবুজের সমারহ। লকলকিয়ে বাড়ছে ধানের গাছ। কোথাও ধানের গাছে থোড় ধরছে। অনেক ক্ষেতে দুধ ধান। আবার কোন কোন ক্ষেতের ধানে শীষ বের হয়েছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে ক্ষেতে বেড়ে উঠা ধান গাছের ডগা। আর ক’দিন পরেই কৃষকের গোলায় উঠবে সোনালী ফসল। বন্যার ক্ষতি পুশিয়ে নিতে বাম্পার ফলনেরও স্বপ্ন বুনছে কৃষক। তবে আশানুরুপ ফলনে বাধা হয়ে দাড়িছে কীটপতঙ্গ ও ইদুর। কীটপতঙ্গ দমনে কীটনাশক ব্যবহার করে কিছুটা সুফল পাচ্ছে। কিন্ত ইঁদুর দমনে কীটনাশক কোন কাজে আসছে না। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কৃষকের নিজস্ব উদ্ভাবিত পলিথিনের ঝান্ডা উড়িয়ে ইদুর দমনের চেষ্টা। চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় রোপা আমন ধান ক্ষেতের ইদুর দমনে কৃষকের এই অভিনব পদ্ধতি নজর কেড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও আমন মৌসুমে
ধানক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রবে কৃষককুল দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ইঁদুর আকারে ছোট
হলেও বছরে অনেক শষ্যের ক্ষতি করে। মাঠের ফসল উৎপাদন ও গুদামজাত শস্য
সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ইঁদুর প্রধান সমস্যা। বর্তমানে আমনের ধান ক্ষেতগুলো
ধানের থোরে ভরে উঠেছে। দিন শেষে সন্ধ্যা নামলেই ইঁদুরের উপদ্রুবও বৃদ্ধি
পেয়ে থাকে। ফলে ইঁদুরের দল ধান গাছের গোড়া কেটে গাছ ফেলে ধানের থোর নিয়ে
পালিয়ে যাচ্ছে, যা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে দিনের আলো না ফোটা
পর্যন্ত ধানক্ষেতে ইঁদুরের অত্যাচার চলতে থাকে। ইঁদুর তাড়াতে কাজ করে না
কোন কীটনাশক। তাই ইঁদুর তাড়ানোর নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে কৃষকেরা। তারা
আমনের ক্ষেতে পলিথিন ঝান্ডা ওড়ানোর ব্যবস্থা করেন। কয়েক বছর ধরে এই
পদ্ধতিতে ইদুর তাড়ানো সুফল পাচ্ছে কৃষক। তাই কৃষি বিভাগও এই পদ্ধতির
পরামর্শ দেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার অধিক পরিমান ক্ষেতে আমন ক্ষেতে
পলিথিনের ঝান্ডা উড়িয়েছেন কৃষকরা। ধান ক্ষেতের ভেতর কঞ্চি কিংবা ছোট আকরের
খুটি পুতে তার মাথায় পলিথিন বেধে দেওয়া হয়েছে। বাতাসের কারণে পলিথিন পতপত
শব্দ করে উড়তে থাকে। এই শব্দ পেয়ে ইঁদুর মনে করে কেউ আসছে, তাই ভয়ে পালিয়ে
যায়। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। কাজিপুর উপজেলার পাঁচগাছি আব্দুল সালাম
বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছে। ধানে এখন থোর বের
হচ্ছে। এ অবস্থায় ধান ক্ষেতে ইঁদুর আক্রমন করেছে। ধান গাছ কেটে সাবার করছে।
কোন কীটনাশক প্রয়োগে কাজ হচ্ছে না। ল্যনিরেট নামে এক ধরনের ঔষধ বাজারে
পাওয়া যায়। কিন্ত দাম অনেক বেশী। তারপরও আশানুরপ ফল পাওয়া যায় না। তাই ধান
ক্ষেতে খুটি পুতে পরিত্যাক্ত পলিথিন উড়িয়ে ইঁদুর তাড়ানোর ব্যবস্থা করেছি।
এতে ইঁদুরের উপদ্রুপ অনেকটাই কমে গেছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মামুনুর রহমান বলেন, কৃষকের উদ্ভাবিত ইঁদুর দমনের এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেকেই সুফল পেয়েছে। এ কারনে প্রতি বছরই কৃষকের মাঝে এই পদ্ধতি ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ছে। বিনা খরচে অধিক সুফল পাওয়ায় ধান ক্ষেতে পলিথিনের নিশান উড়িয়ে ঈদুর তাড়ানোর পদ্ধতি কৃষকের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মামুনুর রহমান বলেন, কৃষকের উদ্ভাবিত ইঁদুর দমনের এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেকেই সুফল পেয়েছে। এ কারনে প্রতি বছরই কৃষকের মাঝে এই পদ্ধতি ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ছে। বিনা খরচে অধিক সুফল পাওয়ায় ধান ক্ষেতে পলিথিনের নিশান উড়িয়ে ঈদুর তাড়ানোর পদ্ধতি কৃষকের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।