বন্যায় গোচারণভুমির ক্ষতি হওয়ায় কাজীপুরের যমুনা নদীর খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, মনসুরনগর, মাইজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, শুভগাছা, চরগিারশ ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে গো-খাদ্যের চাহিদা পুরনে বেড়েছে খড়ের কদর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাজারো সমস্যা সংকটের মাঝে চরের মানুষ গুলো যে যার মতো করে ঘুরে দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা করছেন। নানা পেশার অন্তরালে তারা খুজে পেয়েছেন গরু পালনের নতুন পথ। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু ক্রয় করে খামার গড়ে তোলেন চরের মানুষ। এসব খামারে গাভি পালন ও প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করছেন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট গরুর খামার। প্রায় চার বছর ধরে নতুন এই পথে এগিয়ে চলেছেন চরের মানুষ। যমুনা চরে গরু পালন লাভজনক। খাদ্যের ব্যয় খুবই কম। কারন চরে সব সময় পর্যাপ্ত গো-খাদ্য পাওয়া যায়। রাখাল সারাদিন গরু গুলোকে চরের পতিত জমিতে প্রাকৃতিক ভাবে গজানো ঘাস খাওয়ান। গরুর জন্য খৈল, ভুষি, নালী, চালের খুদসহ কোন খাবারই বাজার থেকে ক্রয় করতে হতো না।
কিন্ত বর্তমানে বদলে গেছে যমুনা চরের সেই চিত্র। দীর্ঘ দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা মাঠের ঘাস পচে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। অধিকাংশ বাড়িতে পানি ওঠে ভেসে েেগছে খড়ের পালা। এ কারণে যমুনার চরে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে মল্লিকপাড়া, নতুন মাইজবাড়ী, দক্ষিণ চালাল, ঘোড়াগাছা, গিরিশ ও ফুলজোড় চরে গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে খড়ের কদর বেড়ে গেছে। বর্তমানের চর এলাকার মানুষের জন্য নদীর ঘাটে খড়ের বাজার বসেছে। প্রতিদিন এই বাজার থেকে খড় কিনছেন গৃহস্থরা। চাহিদা বেশী থাকায় আগের তুলনায় খড়ের দামও বেড়ে গেছে।
মাইজবাড়ী চরের কৃষক মতি মন্ডল জানান, তার গোয়ালে ৬টি গরু আছে। নিজের জমি না থাকায় তার সংগ্রহে খড় নেই। তাই গরুর জন্য চরের পতিত জমি থেকে ঘাস সংগ্রহ করতেন। কিন্ত চর তলিয়ে যাওয়ায় ঘাস সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। তাই দুরদুরান্ত থেকে নদীপথে খড় সংগ্রহ করছেন। ফুলজোড় চরের দিনমজুর রহিম ও বাদশা জানান, তাদের ৫টি গাভি আছে। দৈনিক ১০ কেজি করে দুধ দেয়। দুধ বিক্রির টাকায় চলে তার সংসার। খাদ্যের অভাবে গাভীর দুধ কমে গেছে। গাভিকে খায়ানোর জন্য বাজার থেকে খড় কিনছেন। প্রতি আটি (স্থানীয় ভাষায়) খড়ের দাম ১২টাকা করে। ভূয়াপুর থানা থেকে আসা খড়ের পাইকারী ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে যমুনা নদীপথে গরুর খাবারের জন্য খড় কিনে চরের মানুষের জন্য মেঘাই নদী ঘাটে এনেছি। ধান কাটার মৌসুমে এক আটি খড়ের দাম ছিল ২টাকা, এখন সেই খড় বিক্রি হচ্ছে ১২টাকা আটি।