আজ পহেলা আগস্ট। বাঙালি, বাংলাদেশের শোকের মাস। বর্ষণমুখর এই মাসটি আমাদের জন্য অশ্রু ও বেদনার মাস। এ মাসের ১৫ তারিখের রাতটি কেবল বঙ্গবন্ধু ও সেদিন ৩২ নম্বরে উপস্থিত পরিবারের স্বজনদের নৃশংস হত্যার কালরাত নয়, নয় কেবল শেখ মনি দম্পতি, আবদুর রব সেরনিয়াবাত হত্যাকা-ের কালরাত। এ ছিল এক জঘন্য চক্রান্ত ও গভীর ষড়যন্ত্রের বহির্প্রকাশ। এ কেবল কয়েকজন রজনীতিবিদের হত্যাকা- নয়, এ ছিল আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উল্টোযাত্রার অপপ্রয়াস।
এই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে যেন এক বিভাজন রেখা। বায়ান্ন থেকে এ
জাতির যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল তার গতিমুখ ছিল গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা
ও স্বাধীনতার দিকে। কিন্তু পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের সঙ্গে জাতীয় ইতিহাসেরও
গতি পরিবর্তনের জবরদস্তি আমরা লক্ষ করি। সেই থেকে টানা দুই দশক বাংলাদেশের
রাজনীতি চলেছে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যাখ্যাত পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়াশীলতার
ধারায়। বহু আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এ দেশ আবার স্বাধীনতার
চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সামনে চলার প্রেরণা ফিরে পেয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও
জেলহত্যার ঘাতকদের বহু প্রত্যাশিত বিচার ও শাস্তি হয়েছে। একাত্তরের
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও চলছে এবং অনেকের রায় অনুযায়ী শাস্তি হয়েছে।
ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং জেলের ডায়রি ‘কারাগারের
রোজনামচা’ প্রকাশিত হয়েছে। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার এ যেন
প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমাদের সামনে। অনেক বিতর্ক ও অপপ্রচার কাটিয়ে আজ
বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি জাতির সামনে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাস্বর হয়ে উঠেছে।
এই আগস্ট মাস নানা কারণেই শোকবিধুর মাস। এই মাসেই তিরোধান ঘটেছে বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এ মাসেই জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে প্রাণ
হারিয়েছিলেন লাখো মানুষ। এ মাস আমাদের শোকার্ত করে জাতীয় কবি নজরুলের
মৃত্যু উপলক্ষে। এ মাসে সাম্প্রতিককালের বাঙালির প্রিয় কবি শামসুর রাহমান ও
মুক্তচিন্তার লেখক এবং কবি হুমায়ুন আজাদেরও মৃত্যু হয়েছিল। আর
বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে
গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল এ মাসেই। সেই হামলায় আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি
রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
তবে সব ছাপিয়ে আপামর বাঙালি বারবার স্মরণ করে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।
No comments:
Post a Comment