ঈদুল আযহা সামনে রেখে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী পরিবহনের জন্য ঢাকার কাউন্টারগুলো থেকে বাসের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের ৫ থেকে ১১ তারিখের টিকেটের জন্য গাবতলী, শ্যামলী ও কল্যাণপুর বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে মঙ্গলবার ভোর থেকে জমছে মানুষের ভিড়।
কাউন্টার ঘুরে ১০ তারিখ পর্যন্ত তিন দিনের টিকেটের চাহিদা বেশি দেখা যায়, যার মধ্যে ৮ সেপ্টেম্বর রাতের সব টিকেট ভোর বেলায়ই বিক্রি হয়ে গেছে।
সোমবার রাত থেকে টিকেট নিতে আসা অনেকেই অতিরিক্ত বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
গাবতলীর মাজার রোডে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে সকাল ৮টায় টিকেটপ্রত্যাশীদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়।
মঙ্গলবার ভোর ৬টায় কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে দুঘণ্টায়ও টিকেট পাননি নাভানা সিএনজির কর্মী মশিউর রহমান।
তিনি বললেন, “গাইবান্ধা যাব, ৯ তারিখের টিকেটের জন্য এসেছি। কিন্তু যে ভিড় টিকেট পাব কি না জানি না।”
মিরপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এসেছেন ভোর ৫টায়; টিকেট পাননি তিনিও।
“আমি রংপুর যাব। কিন্তু ৮, ৯ ও ১০ তারিখের সরাতের টিকেট নাই বলছে। দেখা যাক কি হয়।”
গাইবান্ধা যাওয়ার জন্য টিকেট পেয়েছেন এলিট পেইন্টের কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক। তিনি বললেন, “৮ তারিখ ফ্যামিলিকে পাঠিয়ে দেব। আমি যাব ১০ তারিখে। দুই দিনের টিকেটই পেয়েছি। কিন্তু রাতের টিকেট পাইনি, সকালেরটা দিয়েছে।”
প্রত্যাশিত টিকেট পেয়ে স্বস্তির কথা জানালেন রংপুরের যাত্রী মাহবুব আলম: “৮ তারিখ সকালের টিকেট চেয়েছিলাম, পেয়েছি। সামনের সিটের টিকেট পাইনি, তাতেও সমস্যা নেই। বাড়িতে তো যেতে পারব।”
চাহিদা বেশি থাকায় ৮ তারিখের টিকেট দ্রুতই শেষ হয়ে গেছে বলে শ্যামলী পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক পারভেজ মাহমুদ জানালেন।
তিনি বলেন, “আমরা টিকেট বিক্রি শুরু করেছি ভোর সাড়ে ৬টায়। প্রথম দুই ঘণ্টায়ই ৮ তারিখের রাতের বেশিরভাগ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে অন্যান্য দিনের টিকেট এখনো আছে।”
কল্যাণপুরের এসবি পরিবহনের কোনোটির কাউন্টার থেকেই প্রত্যাশিত টিকেট পাননি বলে জানালেন সাভারের গেণ্ডা এলাকার ব্যবসায়ী মো. রাজন করিম।
তিনি বলেন, “১০ তারিখে কুষ্টিয়া যাওয়ার জন্য টিকেট চেয়েছিলাম। কিন্তু এখান থেকে বলছে টিকেট নাই। আজ মাত্র বিক্রি শুরু করল। আজই টিকেট শেষ হয় কী ভাবে?”
এসি বাসের টিকেট শেষ হলেও ননএসি গাড়ির পর্যাপ্ত টিকেট আছে বলে এসবি পরিবহনের বিক্রয়কর্মী তানিম আহমেদ জানান।
“এসি গাড়ির টিকেটের জন্য লোকজন গতকাল রাত থেকে এখানে অপেক্ষা করছে, তারা টিকেট পেয়েছে।”
কল্যাণপুরের ডিপজল পরিবহনের কাউন্টারে প্রত্যাশিত দিনের টিকেট পেলেও তা পেছনের সারির হওয়ায় ক্ষোভ জানালেন রংপুরের যাত্রী সিরাজুল ইসলাম।
“আমি ৯ তারিখের টিকেটের জন্য ভোর সাড়ে ৫টায় এখানে এসেছি। আমি ছিলাম লাইনের সবার আগে। কিন্তু আমাকে পেছনের সারির টিকেট ধরিয়ে দিয়েছে। জানতে চাইলে বলছে, সামনের সিট নেই। টিকেট তাহলে গেল কোথায়?”
ডিপজল পরিবহনে টিকেটের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, “বগুড়ার ননএসি গাড়ির ভাড়া ৩৫০ টাকা। কিন্তু আজ ৫০০ টাকা করে নিচ্ছে।”
তবে কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম অতিরিক্ত দাম নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, “আমরা সরকারি নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি। কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না।
“আমাদের এখানে এখনো পর্যাপ্ত টিকেট আছে। কেউ খালি হাত ফিরবে না।”
ভোর ৫টা থেকে গাবতলীর হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে অপেক্ষা করে বেলা সাড়ে ১০টায়ও টিকেট পাননি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. রিফাত হাসান।
এই কাউন্টারে নারী যাত্রীদের টিকেট দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগ করলেন সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী শান্তা ইয়াসমিন রিমু।
“আমি এখানে এসেছি সকাল ৯টায়। আমার আগে ১২ জন ছিল। এখন সোয়া ১১টা বাজে। আমার সামনে এখনো তিন জন আছে। ছয় জন পুরুষকে টিকেট দেওয়ার পর একজন নারীকে টিকেট দেয়। এজন্য দেরি হচ্ছে।”
উত্তরবঙ্গের বড় পরিবহনগুলো ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করলেও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ বাসের টিকেট বিক্রি শুরু হয়নি।
সোমবার গাবতলীর কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি পরিবহন সীমিত আকারে টিকেট বিক্রি করছে।
যশোর ও চুয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি রুটে চলাচলকারী রয়েল পরিবহনের বেশিরভাগ অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।
গাবতলী টার্মিনালে পুর্বাশা, ঈগল, সাকুরা, গোল্ডেন লাইন, আনন্দ পরিবহনের কাউন্টারে এখনো অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়নি।
দ্রুতি পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. মজনু মিয়া বলেন, “আমাদের গাড়ি কম। এজন্য ঈদযাত্রার আগে টিকেট দেই, অগ্রিম বেচি না।”
No comments:
Post a Comment