বিস্তারিতঃ- সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীর চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে শিক্ষকদের বদলীর অভিযোগ ওঠেছে। একই সঙ্গে প্রায় অর্ধশত শিক্ষককে গণবদলী করায় চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে হুমকীর মধ্যে পড়েছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতিকে পাশ কাটিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিভাগীয়ভাবে সরাসরি আরও দু’জন শিক্ষককেও অন্য জেলায় বদলী করা হয়েছে। এদিকে, গণহারে বদলীর বিষয়টি উলে¬খ করে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮মার্চ কাজিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি এক জরুরী সভায় ৪৩জন শিক্ষককে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে চরাঞ্চল থেকে অন্যত্র বদলীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ওই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পরের দিনই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে রেজুলেশনসহ সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই সিদ্ধান্তের আলোকে বদলীর আদেশ প্রদান করেন।
উপজেলা পরিষদ ও শিক্ষকদের অপর একটি সূত্র জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি বিদেশে থাকায় তিনি ২৯মার্চ সভার দিন ধার্য্য করেছিলেন। কিন্তু কমিটির অনান্য সদস্যরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নির্ধারিত তারিখের একদিন আগেই সভা করেন। সূত্রটি আরও জানায়, এমনিতেই চরাঞ্চলে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। তারপরও গণহারে বদলী করায় শিক্ষার্থীরা দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনসন্ধানে জানা যায়, বদলীকৃত ৪৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৭টি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষক থাকলেও বদলী করা হয়েছে। উত্তর বুরুঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’জন কর্মরত থাকলেও দু’জনকেই, চর মানিকদাইড় বিদ্যালয়ে তিনজনের মধ্যে দু’জনকে ও দক্ষিন সালাল বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষকের মধ্যে দু’জনকে বদলী করা হয়েছে।
বিশুড়িগাছা বিদ্যালয়ে ২জন ও উজান মেওয়াকোলা নব্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘোড়াগাছা, পারখুকশিয়া, খাসরাজবাড়ী, ভাটি মেওয়াকোলা, যুক্তিগাছা, রেহাই শুড়িবেড়, ভেটুয়াখোলা বাঁশজান, দক্ষিন মহিমাপুর নব্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনজন করে শিক্ষক থাকলেও তাদের বদলী করা হয়েছে। প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলী করা হলেও বেশীর ভাগ বিদ্যালয়ে এখনও কোন শিক্ষক যোগদান করেননি। এ ছাড়াও বেশীর ভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষক উচ্চতর (ডিপিএড) প্রশিক্ষণে রয়েছে।
খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের রাজবাড়ি দক্ষিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহানা খাতুন জানান, তার বিদ্যালয়ে অনুমোদিত ৫জনের বিপরীতে ৪জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। একজন শিক্ষক প্রশিক্ষণে গেছেন। মরিয়ম খাতুন নামের এক শিক্ষককে বিভাগীয়ভাবে সরাসরি বদলী করা হয়েছে। তিনি ছাড়পত্র না নিয়েই গত ১৭এপ্রিল চলে গেছেন। প্রতিস্থাপনে কোন শিক্ষকই যোগদান করেননি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
এব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বলেন, এটি আসলে গণবদলী নয়। এর আগেও এরকম বদলী করা হয়েছে। তাছাড়া, কাজিপুর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশেই ওখানে শিক্ষক প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলী করা হয়েছে। তবে, বদলীকৃত শিক্ষক যদি তা অমান্য করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments:
Post a Comment