বিস্তারিতঃ“নাঈম আশরাফের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্দাইল ইউনিয়নে। তার বাবার নাম #আমজাদ_হোসেন। আর তার আসল নাম #হালিম। এলাকায় আপাদমস্তক ‘চিটার’ হিসেবে পরিচিত তিনি।
সিরাজগঞ্জের হাসানের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। হাসানও মিরপুর এলাকায় থাকেন বলে ওই এলাকার বাসিন্দারা জানেন।
কাজীপুরের গান্দাইল গ্রামে যে বাড়িটি হালিমের বলে স্থানীয়রা জানান, বুধবার দুপুরে তা তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
পাশের বাড়ির মাহমুদা খাতুন বলেন, “বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে হালিম কিছুদিন আগে তার বাবা-মাকে ঢাকায় নিয়ে গেছে।
পত্রিকায় ‘নাঈম আশরাফ’ নামে ছাপানো ছবি দেখে তিনি বলেন, “এটাই হালিম। হাসান মোহাম্মদ হালিম।”একই কথা বলেন মাহমুদার স্বামী দিনমজুর আবু বকর সিদ্দিকসহ গ্রামবাসী।
মাহমুদা বলেন, “হালিম পাঁচ-ছয় বছর বাড়ি আসে না। বাড়ির সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। বসতবাড়ি ও আবাদি জমি মিলে ১৭ শতক জায়গা আছে তাদের। আগে হালিমের বাবা ফেরি করে থালা-বাটি বিক্রি করতেন। ক্ষেতমজুর হিসেবে মাঠেও কাজ করতেন।”হালিম ঢাকায় দুটি বিয়ে করেছেন বলে গ্রামবাসী জানে।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে হালিমের লাগানো বিভিন্ন পোস্টার-ব্যানারও দেখান স্থানীয়রা; সেখানে থাকা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা নাঈমের ছবির মতোই।
কাজীপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “হালিম কখনও দলের মিছিল-মিটিং করেনি। কিন্তু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পদ ব্যবহার করে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন লাগায়।“যুবলীগের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেসব ব্যানার-ফেস্টুন সরানো হয়নি।
”পত্রিকায় ছাপানো ‘নাঈম আশরাফ’কে হাসান মোহাম্মদ হালিম বলে শনাক্ত করেন কাজীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হুদা মিষ্টি।তিনি বলেন, “কমিটিতে তার নাম নেই। নিজের ইচ্ছায় চিটারি করে ব্যানারে সে পদবি ব্যবহার করেছে।”এই হালিমকে নিয়ে অনেক ‘দেন-দরবার’ করেছেন বলে জানান কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন।"ছোটবেলা থেকেই হালিম প্রতারণার সাথে জড়িত। বাবা-মা ও নিজের নাম বদল করে এর আগেও বেশ কয়েকটি অপকর্ম করেছিল।”
গান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বলেন, “হালিম নাম-পরিচয় গোপন করে ছাত্র অবস্থায় বগুড়ায় এবং এক বছর আগেও ঢাকার মোহাম্মদপুরে এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। সে দরবার আমি নিজেও করেছি।“বছরে দুই-একবার এলাকায় আসে হালিম। প্রতারণাই তার পেশা। স্কুলজীবন থেকেই সে প্রতারক। আমার কাছেও তার বিরুদ্ধে লোকজন অভিযোগ করেছে। কিন্তু এলাকায় না থাকায় তার বিচার করতে পারছি না।”
হালিমের চাচা পরিচয় দেওয়া আবুবকরের প্রতিবেশী অটোরিকশাচালক শামীম হোসেন বলেন, “২০০৪ সালে গান্দাইল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে হালিম। এই স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পরিচয় দিয়ে রাজশাহী বোর্ড থেকে প্রশ্নপত্র এনে ফেঁসে যায় সে।
“এরপর ভর্তি হয় বগুড়া পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে। সেখানে পড়াশুনা করা অবস্থায় সিরাজগঞ্জ শহরের এক প্রভাবশালী ঠিকাদারকে নিজের বাবা পরিচয় দিয়ে বিত্তশালী পরিবারের এক মেয়েকে বিয়ে করে। পরিচয় জানার পর হালিমকে মারধর করে মেয়েকে ছাড়িয়ে নেয় তারা। বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়। এরপর সে ঢাকা তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে ডিপ্লোমা পাস করে বলে শুনেছি।”
হালিম অনেক প্রভাবশালীকে ব্যক্তিকে ‘বাবা’ বলে পরিচয় দিতেন বলে দাবি করেন গ্রামের বাজারের পান দোকানি আবু সাঈদ।
“জীবনে সে বহুত মানুষকে নিজের বাবা বানিয়ে আকাম-কুকাম করেছে। এবার হয়ত আর পার পাবে না।”
এদিকে,গত ২৮ মার্চের জন্মদিনের এক পার্টির ঘটনা নিয়ে গত শনিবার এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বনানী থানায় ধর্ষণের মামলা করেন, যাতে নাঈমসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, রেগনাম গ্রুপ ও পিকাসা রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের দেহরক্ষী ও গাড়িচালক।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন এবং অন্যরা ছিলেন সহযোগী।
সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার দাবি, সাফাত তার বন্ধু নাঈমের কথায় চলেন।
সুত্রঃ-বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
No comments:
Post a Comment