বিস্তারিতঃ-এক বছর আগেও মেয়েটির বয়স ছিল ১৩ বছর। স্থানীয় এক স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। গত বছর বিয়ের উদ্দেশ্যে ১৮ বছর বয়সী প্রেমিকের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। ক্ষুব্ধ বাবা মেয়েকে ‘১৩ বছরের নাবালিকা’ উল্লেখ করে মামলা ঠুকে দেন মেয়ের প্রেমিক, বাবাসহ চারজনের বিরুদ্ধে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিন পেয়ে প্রেমিক মুক্ত হলে মেয়েটি নিজের বাড়ি ছেড়ে উঠে যায় প্রেমিকের বাড়িতে। এরপর বাবা জোর করে মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। নিশ্চিন্ত হতে বিয়েও দিয়ে দেন। তবে বিয়ের নিবন্ধনে মেয়ের বয়স এবার ১৮ বছর উল্লেখ করেছেন। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মেয়ের বয়স ১৩ থেকে বেড়ে ১৮ বছর হয়ে যাওয়ার ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এলাকায়। এখন প্রেমিকের মা এ ঘটনায় উল্টো বিচার দাবি করে বসেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নে। অভিযোগ উঠেছে, বাল্যবিবাহের দায় থেকে বাঁচতে মেয়েটির বাবা মেয়ের বয়স বাড়িয়ে ১৮ বছর উল্লেখ করেছেন। আর এর জন্য জোগাড় করা হয়েছে বয়সের ভুয়া সনদপত্র।
এলাকাবাসী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির সঙ্গে একই গ্রামের ১৮ বছর বয়সী এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা বিয়ে করার উদ্দেশ্যে বগুড়ার শেরপুরে চলে যায়। এর দুদিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি মেয়ের বাবা কাজীপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় প্রেমিক, তাঁর বাবাসহ চারজনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে মেয়ের বয়স ১৩ বছর এবং স্থানীয় স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী বলে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তী সময় গ্রামবাসীর সহায়তায় দুই পক্ষের অভিভাবকদের সমঝোতা হয়। ছেলে ও মেয়ে দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বাড়িতে আসার জন্য বলা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে আসার সময় দুজনকে থানা-পুলিশ ধুনট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে মেয়েটিকে তার বাবার হেফাজতে দেওয়া হয় এবং প্রেমিককে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
প্রায় এক বছর কারাগারে আটক থাকার পর এ বছর উচ্চ আদালতের আদেশে প্রেমিক জামিনে ছাড়া পান। খবর পেয়ে মেয়েটি নিজ বাড়ি ছেড়ে প্রেমিকের বাড়িতে এসে ওঠে। ক্ষুব্ধ বাবা এবার মেয়েকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে যান। মেয়ে যেন আবার এ কাণ্ড না ঘটাতে পারে সে কারণে চটজলদি মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। গত ৩ মার্চ মেয়েকে পাশের গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে (নিবন্ধন নম্বর ২০/২০১৭, পাতা নম্বর ৭১) দেন। নিবন্ধনে মেয়ের বয়স ১৮ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা নিয়েই ঘটেছে বিপত্তি। এক বছরে কীভাবে একজনের বয়স পাঁচ বছর বেড়ে গেল, তা নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ভুয়া বয়সের জন্মসনদ সংগ্রহ করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে মেয়ের বয়স ১৮ বছর ৬ মাস বলে দাবি করেছেন বাবা। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে প্রথমে গ্রামের স্কুলে পড়ে। পরে কারিগরি স্কুলে ভর্তি করা হলেও বেশি দিন পড়েনি। সে নাবালিকা নয়।’ এর আগে মেয়েকে নাবালিকা উল্লেখ করে মামলা করেছিলেন কেন? জানতে চাইলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মেয়েটি যে স্কুলে পড়ত সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন বলেন, মেয়েটি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তবে সে অনিয়মিতভাবে স্কুলে আসত।
বিয়ের কাজি বেলাল হোসেন বলেন, ‘বর-কনের বয়সের সনদ দেখেই বিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে। তাঁরা কীভাবে কোথা থেকে সনদ এনেছেন, এটি দেখার দায়িত্ব আমার না।’
বিয়েতে সাক্ষী কনের এক আত্মীয় জানান, চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়সের সনদপত্র আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কার্যালয় থেকে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে কি না, তা না দেখে বলা কঠিন। যদি তা দেওয়া হয়ে থাকে তবে তা আমার অজান্তে হয়েছে।’
এদিকে প্রেমিকের মা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা ও এক বছর জেল খাটার ঘটনায় মেয়ের পরিবারের বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওই মেয়ে নাবালিকা বলে আমার ছেলেকে জেল খাটতে হয়েছে। সেই নাবালিকা মেয়েকে কীভাবে বিয়ে দেওয়া হলো। তাহলে আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে কেন শাস্তি দেওয়া হলো। কে দেবে আমার এই বিচার?
সূত্রঃ- দৈনিক প্রথম আলো
দৈনিক শিক্ষা বার্তা
দৈনিক তরুন কন্ঠ
No comments:
Post a Comment